আইন ও আইন ব্যাবস্থা | LAW AND LEGAL SYSTEM
আইন কী (What is Law)?
এক কথায় বলা কঠিন হলেও, সহজ করে বলা যায়, আইন হলো এমন কিছু নিয়মকানুন যা একটি দেশ বা সমাজ মেনে চলতে বাধ্য থাকে।
এই নিয়মগুলো সরকার বা কোনো কর্তৃপক্ষ তৈরি করে।
এগুলো সবাই মেনে চলে, কারণ এগুলো দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
যদি কেউ আইন না মানে, তাহলে আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারে।
ধরুন, ট্র্যাফিকের আইন। লাল বাতি জ্বলে উঠলে আপনাকে গাড়ি থামাতে হবে—এটা একটি আইন। এই নিয়মটি সবার জন্য সমান, এবং এটা মানলে রাস্তায় দুর্ঘটনা কম হয়।
আইন ও রাজনীতি
আইন ও রাজনীতিকে অনেকে 'ডিম আগে নাকি মুরগি আগে'—এই বিতর্কের সঙ্গে তুলনা করেন। কারণ এদের সম্পর্ক খুব গভীর এবং কোনটা আগে এসেছে, তা বলা মুশকিল।
এক দিক থেকে দেখলে, রাজনীতিই আইনের জন্ম দেয়।
সমাজে যখন কোনো সমস্যা বা দাবি ওঠে, যেমন—সবার জন্য শিক্ষার অধিকার বা কাজের সুযোগ, তখন মানুষ এর জন্য আন্দোলন করে।
এই আন্দোলনগুলোই আসলে রাজনীতি।
এই রাজনীতির চাপে সরকার তখন নতুন আইন তৈরি করে, যা মানুষের দাবি পূরণ করে।
অন্য দিক থেকে দেখলে, আইনও রাজনীতিকে প্রভাবিত করে।
সরকার যখন কোনো আইন তৈরি করে, সেই আইনে যদি কোনো সমস্যা বা দুর্বলতা থাকে, তখন মানুষ আবার তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
এই আন্দোলনগুলো তখন সেই আইন পরিবর্তনের জন্য চাপ তৈরি করে, যা আবার রাজনীতির অংশ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আইন এবং রাজনীতি একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটা ছাড়া আরেকটার অস্তিত্ব কল্পনা করা কঠিন।
তবে, আরেকটা মতবাদ অনুযায়ী, আইন হলো রাজনীতির চেয়ে আলাদা এবং এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে, রাজনীতির উদ্দেশ্য অনেক কিছু হতে পারে—যেমন, ক্ষমতা দখল করা, মানুষের বিভিন্ন চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা ইত্যাদি।
সহজ ভাষায় বলা যায়, রাজনীতি হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষের দাবিগুলো একত্রিত হয়, আর আইন হলো সেই কাঠামো যা সেই দাবিগুলোকে বাস্তবে রূপ দেয় এবং সমাজে শৃঙ্খলা বজায় রাখে।
আইন এবং রাজনীতিকে আলাদা করা কঠিন, কারণ তারা একটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো।
রাজনৈতিক নিয়মকানুন: কিছু নিয়ম আছে যা সরাসরি আইন না হলেও, দেশ চালাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেমন, ব্রিটেনের কিছু নিয়ম লিখিত নয়, কিন্তু সবাই তা মেনে চলে। এগুলোকে রাজনৈতিক নিয়ম বলা যায়।
আইন: আইন হলো সেইসব নিয়ম যা আদালত দ্বারা প্রয়োগ করা যায়। অর্থাৎ, যদি কেউ আইন ভাঙে, তবে আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারে।
সহজ কথায়, আইন এবং রাজনীতি উভয়ই দেশ চালানোর জন্য জরুরি। তবে, আইন হলো সেইসব নিয়ম যা ভঙ্গ করলে শাস্তি হয়, আর রাজনীতি হলো সেইসব নিয়ম যা মেনে চলা হয় কিন্তু তার জন্য সরাসরি শাস্তি নাও হতে পারে। এই দুটি বিষয় মিলেমিশে একটি দেশের শাসনব্যবস্থা তৈরি করে।
আইন ও অধিকার
অধিকার হলো মানুষের কিছু দাবি বা সুবিধা যা তাদের জীবনকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
অধিকার কীভাবে তৈরি হয়? অধিকার কোনো আইন তৈরি করে না। সমাজে মানুষ যখন একে অপরের সঙ্গে মেশে, তখন কিছু দাবির জন্ম হয়। যেমন, সবার ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার, কথা বলার অধিকার।
অধিকারের প্রকারভেদ: অধিকারকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. নৈতিক অধিকার: এই অধিকারগুলো হলো মানুষের নৈতিক দিক থেকে পাওয়া অধিকার। যেমন, কারও ক্ষতি না করা, সত্য কথা বলা। এই অধিকার ভাঙলে মানুষ সামাজিকভাবে খারাপ মনে করে, কিন্তু এর জন্য সাধারণত কোনো আইনগত শাস্তি হয় না।
২. আইনগত অধিকার: যখন সরকার কোনো আইন তৈরি করে কোনো নৈতিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, তখন তা আইনগত অধিকারে পরিণত হয়। যেমন, দেশের সংবিধানে যদি বলা থাকে সবার শিক্ষার অধিকার আছে, তখন তা একটি আইনগত অধিকার। এই অধিকার ভাঙলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হতে পারে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রথমে অধিকারগুলো নৈতিক হিসেবে জন্ম নেয়, আর যখন কোনো আইন সেগুলোকে সমর্থন দেয়, তখন তা আইনি অধিকারে পরিণত হয়। তাই, সব আইনি অধিকারই আসলে কোনো না কোনো নৈতিক অধিকার থেকে আসে।
আইনের প্রধান বিভাগ (Principal Categories of Law)
আইনের প্রকারভেদ
আইনকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: অভ্যন্তরীণ আইন (Domestic Law) এবং আন্তর্জাতিক আইন (International Law)।
অভ্যন্তরীণ আইন (Domestic Law): এটি একটি দেশের নিজস্ব আইন। যেমন, বাংলাদেশের ভেতরের সব আইন। এই আইন আবার দুই ধরনের:
পাবলিক আইন (Public Law): এটি সরকার এবং জনগণের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে। যেমন, কেউ যদি কোনো অপরাধ করে (চুরি, খুন), তাহলে সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা করে। এটি ফৌজদারি আইন (Criminal Law)। এছাড়া, সংবিধান বা সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ও এর অন্তর্ভুক্ত।
প্রাইভেট আইন (Private Law): এটি সাধারণ মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে। যেমন, কারো সাথে চুক্তি করা, সম্পত্তি কেনাবেচা, পারিবারিক বিষয় (বিয়ে, তালাক) ইত্যাদি। এটি দেওয়ানি আইন (Civil Law)।
আন্তর্জাতিক আইন (International Law): এটি বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে। যেমন, দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি বা বাণিজ্য বিষয়ক আইন।
একটি আইন ব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান
আইনবিদ প্রফেসর হার্ট বলেছেন, একটি ভালো আইন ব্যবস্থার জন্য পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান থাকা জরুরি। এই উপাদানগুলো বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থায়ও আছে।
১. শাস্তির বিধান: কিছু নিয়ম যা নির্দিষ্ট কাজ করতে নিষেধ করে বা করতে বাধ্য করে এবং তা না মানলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশের ফৌজদারি আইনে এই ধরনের নিয়ম আছে। যেমন, চুরি করলে জেল হয়।
২. ক্ষতিপূরণের বিধান: যে নিয়মগুলো বলে, কেউ যদি অন্যের ক্ষতি করে, তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাংলাদেশের দেওয়ানি আইনে এই ধরনের নিয়ম আছে। যেমন, চুক্তি ভাঙলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
৩. নির্দিষ্ট কাজের নিয়ম: কিছু নিয়ম যা নির্দিষ্ট আইনি কাজ করার পদ্ধতি বলে দেয়। যেমন, কীভাবে একটি চুক্তি করতে হবে বা উইল তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের দেওয়ানি আইনে এই নিয়মগুলো আছে।
৪. আদালতের ব্যবস্থা: এমন একটি ব্যবস্থা থাকা যেখানে নিয়মগুলো ঠিক কী, কেউ সেগুলো ভেঙেছে কিনা, এবং তার জন্য কী শাস্তি হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় ধরনের আদালত আছে, যা এই কাজটি করে।
৫. আইন প্রণয়নকারী সংস্থা: একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থাকা যার কাজ হলো নতুন আইন তৈরি করা, পুরোনো আইন পরিবর্তন করা বা বাতিল করা। বাংলাদেশের সংসদ (পার্লামেন্ট) এই কাজটি করে।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার তিনটি দিক
একটি দেশের আইন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এই কাজটি তিনটি প্রধান দিকের ওপর নির্ভর করে:
১. প্রাতিষ্ঠানিক দিক (Institutional Aspect): এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো:
আদালত (দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং বিশেষ আদালত)।
বিচারক, আইনজীবী এবং অন্যান্য আইনি পেশাদার।
পুলিশ এবং কারাগার কর্তৃপক্ষ।
২. পদ্ধতিগত দিক (Procedural Aspect): এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো:
কীভাবে তদন্ত বা অনুসন্ধান করা হবে।
কীভাবে মামলা দায়ের হবে।
কীভাবে সাক্ষ্য নেওয়া হবে বা জেরা করা হবে।
কীভাবে আপিল করা হবে।
৩. ধারণাগত দিক (Conceptual Aspect): এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো:
আইন ব্যবস্থার ইতিহাস।
আদালতের পুরোনো রায়ের নীতি (নজির)।
আইন প্রণয়নের নিয়মকানুন।
আইনি সহায়তা ইত্যাদি।
আইনের বিভিন্ন ধরণ বা প্রকারভেদ (Categories of Law)
আইনের প্রধান ভাগ
একটি দেশের সব আইনকে মূলত দুটি বড় ভাগে ভাগ করা যায়:
জাতীয় বা অভ্যন্তরীণ আইন (National or Domestic Law): এটি একটি দেশের নিজস্ব আইন, যা শুধু সেই দেশের ভেতরেই কার্যকর।
আন্তর্জাতিক আইন (International Law): এটি বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্ক এবং চুক্তি নিয়ে কাজ করে।
জাতীয় আইনের আরও দুটি ভাগ
জাতীয় আইনকে আবার দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়:
পাবলিক আইন (Public Law)
পাবলিক কী? এই আইন রাষ্ট্র বা সরকারের সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
উদাহরণ: ধরুন, কেউ যদি চুরি বা খুন করে, তাহলে সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা করে। এটি ফৌজদারি আইনের অংশ। এছাড়া, দেশের সংবিধান এবং সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক বিষয়ও পাবলিক আইনের অন্তর্ভুক্ত। এখানে সরকার একটি পক্ষ হিসেবে সরাসরি জড়িত থাকে।
প্রাইভেট আইন (Private Law)
প্রাইভেট কী? এই আইন সাধারণ মানুষের নিজেদের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে।
উদাহরণ: ধরুন, আপনি আপনার বন্ধুর কাছে কোনো জমি বিক্রি করলেন এবং আপনাদের মধ্যে একটি চুক্তি হলো। এই চুক্তি বা কোনো পারিবারিক বিষয় (যেমন, বিয়ে বা তালাক) নিয়ে যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে সেই বিবাদ মেটাতে আদালত সাহায্য করে। এখানে রাষ্ট্র সরাসরি কোনো পক্ষ নয়, বরং বিচারকের ভূমিকা পালন করে। চুক্তি আইন, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ইত্যাদি এর উদাহরণ।
তত্ত্বগত এবং পদ্ধতিগত আইন
পাবলিক এবং প্রাইভেট আইন উভয়ই আরও দুটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে:
তত্ত্বগত আইন (Substantive Law)
তত্ত্বগত কী? এই আইনগুলো বলে দেয় আপনার কী অধিকার, কী দায়িত্ব বা কী অবস্থা আছে। অর্থাৎ, এটি কোনো বিষয়ের মূল সংজ্ঞা বা ভিত্তি দেয়।
উদাহরণ: দণ্ডবিধি আইন (Penal Code) বলে দেয় চুরি করা একটি অপরাধ এবং এর শাস্তি কী। চুক্তি আইন বলে দেয়, কীভাবে একটি বৈধ চুক্তি তৈরি হয়।
পদ্ধতিগত আইন (Procedural Law)
পদ্ধতিগত কী? এই আইনগুলো বলে দেয় কীভাবে একটি মামলার কাজ বা বিচার পরিচালিত হবে। এটি হলো কাজের পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া।
উদাহরণ: দেওয়ানি কার্যবিধি বা ফৌজদারি কার্যবিধি হলো পদ্ধতিগত আইন। এই আইনগুলো বলে দেয়, কীভাবে একটি মামলা দায়ের করতে হবে, কীভাবে প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে, এবং কীভাবে আদালতে বিচার হবে।
সহজ কথায়, তত্ত্বগত আইন আপনাকে অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে ধারণা দেয়, আর পদ্ধতিগত আইন আপনাকে সেই অধিকার বা কর্তব্য বাস্তবায়নের উপায় শেখায়।
বাংলাদেশে পাশকৃত আইন (Laws passed in Bangladesh)
বাংলাদেশে পাশকৃত আইনের সংখ্যা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এবং পরে মিলিয়ে মোট ৯৯৯টি আইন পাশ হয়েছে।
এর মধ্যে ৩৬৬টি আইন স্বাধীনতার আগে পাশ করা হয়েছিল।
বাকি ৬৩৩টি আইন স্বাধীনতার পর পাশ করা হয়েছে।
এই সংখ্যাটি ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাশ হওয়া ৯৫৭টি এবং ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাশ হওয়া ৪২টি আইনের উপর ভিত্তি করে বলা হয়েছে।
আইনের সংশোধন ও সমস্যা
আইনগুলো প্রায়ই নতুন করে সংশোধন করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংশোধনের পর কিছু সমস্যা দেখা যায়।
সাধারণত, যখন কোনো আইন সংশোধন করা হয়, তখন পুরো আইনটিকে নতুন করে ছাপানো উচিত। এতে করে সবার জন্য আইনটি ব্যবহার করা সহজ হয়।
কিন্তু আমাদের দেশে এই পদ্ধতি তেমন প্রচলিত নয়। কোনো আইন সংশোধন হলে সরকার শুধু একটি গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ করে, যেখানে শুধু সংশোধনের বিষয়টি লেখা থাকে।
এর ফলে, সাধারণ মানুষ বা এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও পুরো আইনটি সম্পর্কে সহজে জানতে পারে না। তাদের সংশোধনী এবং মূল আইন মিলিয়ে দেখতে হয়, যা বেশ ঝামেলার।
সহজ ভাষায় বলা যায়, বাংলাদেশে প্রচুর আইন থাকলেও সেগুলো নিয়মিতভাবে আপডেট করা এবং সবার জন্য সহজে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।
আইন খুঁজে বের করা কেন জরুরি?
আইনের সংশোধন করা অংশগুলো সহজেই খুঁজে পাওয়া সাধারণ মানুষ, আইনজীবী, বিভিন্ন সরকারি বিভাগ এবং অন্য সবার জন্যই খুব দরকারি। যদিও সরকারের উচিত নিয়মিতভাবে সংশোধিত আইন প্রকাশ করা, আমাদের দেশে এই কাজটি এখনো পুরোপুরি সুসংগঠিত নয়।
কীভাবে একটি আইন খুঁজতে হয়?
আইন সাধারণত দু'ধরনের হয়:
বিধিবদ্ধ আইন (Statute Law): এই আইনগুলো সংসদ বা সরকার পাশ করে।
নজির (Precedent): এটি আদালতের দেওয়া পুরোনো রায় বা সিদ্ধান্ত, যা ভবিষ্যতের একই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
শিক্ষার্থী বা আইনজীবীদের জন্য এই দুই ধরনের আইন খুঁজে বের করা শেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১. বিধিবদ্ধ আইন খোঁজার উপায়:
বিধিবদ্ধ আইন খুঁজে বের করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো:
১. সাল বা Citation জানা: যদি আপনার কাছে আইনের সাল (যেমন, ১৯৫০ সালের আইন) অথবা তার সংক্ষিপ্ত নাম (citation) জানা থাকে, তাহলে আপনি সহজেই এটি বাংলাদেশ কোড-এ খুঁজে নিতে পারবেন। বাংলাদেশ কোড হলো দেশের সব আইনের একটি সংকলন।
২. সাল জানা না থাকলে: যদি আপনার কাছে সাল বা সংক্ষিপ্ত নাম জানা না থাকে, তাহলে আপনাকে বাংলাদেশ কোড-এর সূচিপত্র থেকে ক্রমানুসারে (সংখ্যা অনুসারে) খুঁজতে হবে।
৩. কোথায় পাওয়া যায়? এই আইনগুলো সাধারণত সরকারের গেজেট-এ প্রকাশিত হয়। এছাড়া, বাংলাদেশ কোড বা পাকিস্তান কোড-এও এগুলো পাওয়া যায়।
২. নজির খোঁজার উপায়:
নজির খোঁজার পদ্ধতিটি একটু ভিন্ন:
১. কোথায় পাওয়া যায়? নজিরগুলো সাধারণত আইন প্রতিবেদন (Law Reports) নামক বইগুলোতে সংকলিত থাকে। এই বইগুলোতে আদালতের গুরুত্বপূর্ণ রায়গুলো প্রকাশিত হয়।
২. কীভাবে খুঁজতে হয়? আইন প্রতিবেদনে নজির খুঁজে বের করার একমাত্র উপায় হলো:
সূচিপত্র: বইয়ের সূচিপত্র দেখে মামলার নাম বা বিষয়বস্তু অনুযায়ী খোঁজা।
Reference: যদি আপনার কাছে মামলার কোনো রেফারেন্স নম্বর থাকে, তাহলে সরাসরি সেই রেফারেন্স অনুযায়ী খুঁজে বের করা।

