বাংলাদেশ ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড বনাম বাংলাদেশ (২০০৫) – পঞ্চম সংশোধনী মামলা ব্যাখ্যা
আসসালামু আলাইকুম, Law Ministry BD ওয়েবসাইট এর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই সু-স্বাগতম । আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশ ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড বনাম বাংলাদেশ (২০০৫) – পঞ্চম সংশোধনী মামলা ব্যাখ্যা সম্পর্কে।
বাংলাদেশের সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য যেসব ঐতিহাসিক মামলার রায় হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো পঞ্চম সংশোধনী মামলা। এই মামলার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সামরিক শাসনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং আদালত একে অবৈধ ঘোষণা করেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই রায়ের মাধ্যমে আদালত বলেছিলেন – সংবিধান জনগণের, তাই কোন সামরিক শাসক বা অবৈধ সরকার এটিকে পরিবর্তন করার অধিকার রাখে না।
মামলার প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা হয়।
-
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত সামরিক সরকার নানা আদেশ (Proclamation) এবং সংশোধনী জারি করে।
-
পরবর্তীতে এই সময়ে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য পঞ্চম সংশোধনী আনা হয় (১৯৭৯ সালে)।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধ সামরিক শাসনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
মামলা দায়ের
বাংলাদেশ ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকায় কুরবানীবাড়ি মসজিদের জমি নিয়ে মামলা করেছিল। মামলা চলাকালীন তাদের আইনজীবীরা পঞ্চম সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। এখান থেকেই শুরু হয় সংবিধান সংশোধনী নিয়ে ঐতিহাসিক বিচার।
আদালতের রায় (২০০৫)
হাইকোর্ট ২০০৫ সালে রায় দেন যে:
-
পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ও অসাংবিধানিক।
-
সামরিক শাসনের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করা যায় না।
-
জনগণের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে ক্ষমতা দখলকারীরা কখনো বৈধ হতে পারে না।
-
সংবিধানের মৌলিক কাঠামো (Basic Structure) অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।
পরে এই রায় সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ) ২০১০ সালে বহাল রাখে।
গুরুত্ব ও তাৎপর্য
এই রায় বাংলাদেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে এক মাইলফলক:
-
সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করা হলো।
-
গণতন্ত্র ও জনগণের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো।
-
ভবিষ্যতে কোনো সেনাশাসক সংবিধান পরিবর্তনের দুঃসাহস করতে পারবে না।
-
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা আরও জোরদার হলো।
উপসংহার
বাংলাদেশ ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড বনাম বাংলাদেশ (২০০৫) মামলাটি দেখিয়েছে যে, সংবিধান কেবল একটি কাগজ নয়, এটি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। তাই এর সাথে কারো খেলা করার সুযোগ নেই। এই ঐতিহাসিক রায় আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও আইনশাসনের ভিত্তি আরও মজবুত করেছে।
%20%E2%80%93%20%E0%A6%AA%E0%A6%9E%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%AE%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B6%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A6%A8%E0%A7%80%20%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%B2%E0%A6%BE%20%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE.jpg)